গাইবান্ধার সাঘাটার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের জনবসতিপুর্ণ এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি কয়লা তৈরির কারখানা। এসব কয়লা কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন। তোয়াক্কা করা হচ্ছে না প্রশাসনের অভিযান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা হয় চুল্লি। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৭ থেকে ১০ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২৫০ বা ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পরে এই কয়লা শীতল করে ব্যবসার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রতি বস্তা কয়লার দাম প্রায় ৪শ’ টাকা। হাজার হাজার টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা ভাবছে না পরিবেশ কিংবা জনস্বাস্থ্যের কথা। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এসব কারখানা গুড়িয়ে দিয়ে চলে যাবার পরেই মালিকরা আবার সক্রিয় হয়ে উঠে। ভাঙ্গা চুল্লি মেরামত করে পুরোদমে কাজ শুরু করে। এসব কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেইসঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। গাছের ফল ও মুকুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের বড়াইকান্দি গ্রামের আঃ ওয়ারেস মিয়ার ও একই উপজেলার কামালের পাড়া ইউনিয়নের নইশার পাড়া গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কারখানায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির দৃশ্য। এসময় কারখানা মালিকরা জানান, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ হলেও কিছু করার নেই। এ বিষয়ে গাইবান্ধা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে শিশুসহ বয়স্করাও ফুসফুসের সমস্যা, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যার সম্মুখীন হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইসাহাক আলী জানান, সরকারি অনুমোদন ছাড়া কয়লার কারখানা স্থাপন করা যাবে না। এসব কারখানায় কয়েকবার অভিযান চালিয়ে কারখানা গুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর পরও যদি কেউ কারখানা পরিচালনা করে তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে।