ঘরে পড়ার টেবিলে পড়ে আছে বই-খাতা। আলনায় সাজানো আছে জামা-কাপড়, নেই আসমাউল হুসনা আন্নি। কোথায় কি অবস্থায় আছে জানেনা পরিবারের লোকজন। অপহরণের প্রায় ১০ মাস গত হচ্ছে। মেয়েকে ফিরে পেতে মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও হৃদয় গলছেনা নিষ্ঠুর পাষাণ্ড অপহরণকারীদের। মেয়েকে ফিরে দেয়া দূরের কথা উল্টো মামলা প্রত্যাহারের হুমকী দেয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে আসমাউল হুসনা আন্নির পরিবার। নির্বাক হয়ে পড়ছেন এলাকার সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা।
ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা গ্রামে। ঘটনার আদ্যোপান্ত ও অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সীচা গ্রামের শেফালী বেগমের নাবালিকা মেয়ে আসমাউল হুসনা আন্নি (১৭) পার্শ্ববর্তী সীচা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী ছিলেন। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের পথে একই গ্রামের পাশের বাড়ির মন্জু মিয়ার পুত্র রাশেদ মিয়া (১৯) বিভিন্ন সময়ে প্রেম ভালোবাসার কু-প্রস্তাব দেয়াসহ রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করত। বিষয়টি রাশেদ মিয়ার পরিবারকে অবগত করা হলেও কোন কাজ না হওয়ায় মা শেফালী বেগম মেয়ের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় নিয়ে গাইবান্ধা শহরের একটি ম্যাসে থেকে কোচিং করার ব্যবস্থা করে দেন।
এমতাবস্থায়, গত ১৪-০৯-২০২৩ইং তারিখ সন্ধ্যে আনুমানিক ৬টায় মেয়ে আসমাউল হুসনা আন্নি ম্যাস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। পথিমধ্যে গাইবান্ধা শহরের জেলা পরিষদের সামনে পৌঁছা মাত্র পূর্ব থেকে ঔঁৎ পেতে থাকা রাশেদ মিয়া পক্ষীয় সহযোগীদের সহায়তায় মিথ্যা বিয়ের প্রলোভন দিয়ে আসমাউল হুসনা আন্নিকে সিএনজি যোগে অপহরণ করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। বিষয়টি জানতে পেরে অসহায় মা শেফালী বেগম বিভিন্ন স্থানে সন্ধান করেও মেয়েকে উদ্ধার করতে না পেরে গত ২৩-১০-২০২৩ইং তারিখে গাইবান্ধা সদর থানায় অপহরণকারী রাশেদ মিয়াসহ ৪ জনকে অভিযুক্ত করে একটি মামলা ( নং-২৮/২৩) দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, বিভিন্নখানে অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে গত ১৫-০৭-২০২৪ তারিখে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাজিয়ার চর থেকে থানা পুলিশের সহায়তায় মেয়ে আসমাউল হুসনা আন্নিকে উদ্ধারের পর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করান। পরীক্ষার শেষ দিন রাশেদ মিয়া আবারও মেয়ে আসমাউল হুসনা আন্নিকে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে অপহরণ করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। এর পর থেকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে গুম নাকি পাচার করা হয়েছে? এমন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।
মামলার বাদী শেফালী বেগমের দাবী, রাশেদ মিয়ার পিতা মন্জু মিয়া, জ্যাঠা মফিজল সহোদর ভাই রানা মিয়া এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় ঘটনার নেপথ্যে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করছেন। তাদের কাছে মেয়ের অনুসন্ধান চাইলে তারা উল্টো মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রাম থেকে উচ্ছেদের হুমকী দিয়ে আসছেন। তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনে ভিটে মাটি ছেড়ে মান-সম্মান ও প্রাণ বাঁচাতে নির্বাসিত জীবন-যাপনের আতঙ্কে দিন কাটতে হচ্ছে।
এলাকার সচেতন মহলের ধারনা, রাশেদ মিয়ার পিতা মন্জু মিয়া, জ্যাঠা মফিজল, সহোদর ভাই রানা মিয়াকে প্রশাসনিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে উদ্ধার পেতে পারে আসমাউল হুসনা আন্নি। সেই সাথে পরিবারটি ফেলবে স্বস্তির নিঃশ্বাস।