গাইবান্ধার ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদী রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় স্তূপ করে বছরের পর বছর ধরে চলছে বালু বিক্রির মহাউৎসব। সরকারের টোল আদায়কৃত ঘাটে বিক্রি হচ্ছে না বালু। সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। বালু বোঝাই যানবাহনের অবাধ চলাচলে ক্ষতি হচ্ছে বাঁধের। বিষিয়ে উঠছে পরিবেশ। মিলছেনা ব্যবস্থা।
অনেকের ধারণা, এ সব অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের রয়েছে আঁতাত। গোপনে জায়গা ইজারা দিয়ে বাগিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ নামের সোনার হরিণ। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ বলছেন, ইজারা নয়। দ্রুত নেয়া হবে ব্যবস্থা। কবে মিলবে এ ব্যবস্থা? প্রশ্ন সচেতন মহলের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গাইবান্ধা শহরের ঘাঘট নদীর নতুন ব্রীজ এলাকাসহ তালতলা বাজার, কামারজানি ও ফুলছড়ী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের সৈয়দপুরঘাট পর্যন্ত নদী রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ২০/২৫টি স্তূপ। এসব স্তূপ থেকে বছরের পর বছর ধরে চলছে বালু বিক্রির মহাউৎসব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধভাবে এসব বালু ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে। এর পর বোলগেট ও বড় নৌকাযোগে এনে নদীর তীরে নদী রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায় গড়ে তোলা হচ্ছে পৃথক পৃথক স্তূপ। আর এ সব স্তূপ থেকে চলছে বালু বিক্রির মহাউৎসব। এ সব বালু বহনে প্রতিনিয়ত মাহিন্দ্র টাক্ট্রর, ট্রাক ও ট্রলির অবাধ চলাচলে শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। বালু বহনের সুবিধার্থে অনেক জায়গায় কাঁটা হয়েছে বাঁধের অংশ বিশেষ। পথচারীরা জানান, বাঁধের উপর দিয়ে বালু বোঝাই যানবাহনের অবাধ চলাচলের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ খানাখন্দে পরিনত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে বর্ষায় জলাবদ্ধতা।
অপর দিকে, বন্যার সময় আতঙ্কে পড়তে হচ্ছে বাঁধের কাঁটা অংশ নিয়ে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এ যেন খাল কেঁটে কুমির আনা। শুষ্ক মৌসুমে বালুর স্তূপের পাশ দিয়ে যাতায়াতে দম যেন বন্ধ হয়ে যায়। বাতাসের গতি একটু বাড়লেই বালু উড়ে এসে বাড়িঘরের পরিবেশ বিষিয়ে তোলে। এর ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হন বয়োবৃদ্ধসহ ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলার বালু মহাল থেকে আনা হচ্ছে না এই বালু। আনা হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে। তাও আবার চোরাইভাবে নকল রশিদ মূলে। শুধু তাই নয়, এ বালু নেয়া হচ্ছে না সরকারের টোল আদায়কৃত ঘাটে। স্তূপ করা হয় নদীর তীর সংলগ্ন নদী রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জায়গায়। চালানো হয় চিলমারির বালু হিসেবে। এর ফলে সরকার ২ স্থান থেকে হারাচ্ছেন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। এ থেকে তাদের ধারণা, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের সাথে বালু ব্যবসায়ীদের সখ্যতা রয়েছে এবং গোপনে জায়গা ইজারা দিয়ে বাগিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্থ নামের সোনার হরিণ।
এক স্বাক্ষাতকারে নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ইজারা নয়। বনবিভাগের সাথে কথা বলে বালু ব্যবসায়ীদের নোটিশ দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কবে মিলবে এ ব্যবস্থা? প্রশ্ন সচেতন মহলের।
প্রিয় পাঠক, আরও বিস্তারিত জানতে সাথেই থাকুন। চোখ রাখুন, পরবর্তী সংখ্যায়।