আমার ঘোড়ার গাড়িতে বৌ সাজিয়ে…….। এটি সিনেমার একটি পুরনো গান। এক সময় গ্রাম বাংলার পাড়া গাঁয়ে ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি পালকির বেশ প্রচলন ছিল। সে সময়ে নুতন বৌকে ঘোড়ার গাড়ি কিংবা পালকিতে করে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ি আনা হতো। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের ধারায় ধীরে ধীরে পালকি বিলুপ্ত হলেও এখন ঘোড়ার গাড়ি দখল করেছে চরাঞ্চল।
গাইবান্ধার চরাঞ্চলে এখন শুকনো মৌসুমে যাত্রীসহ পণ্য পরিবহনে একমাত্র মাধ্যম ঘোড়ার গাড়ি। তাই ঘোড়ার গাড়ির কদর বেড়েছে চরাঞ্চলের মানুষের কাছে। গাইবান্ধার মোট আয়তনের ২৫ ভাগেরও বেশী এলাকা তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর চরাঞ্চল। এসব প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে রাস্তাঘাট না থাকায় নদীর হাটুপানি ও বালু চরে পণ্য পরিবহন, অসুস্থ রোগীকে বহন এবং যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ঘোড়ার গাড়িকে।
চরের খানাখন্দ ভরা বালুময় রাস্তায় যেখানে ভ্যান, রিক্সা, ট্রলি, ট্রাক যেতে পারেনা সেই সকল রাস্তায় জনপ্রিয় বাহন হিসেবে কদর বেড়েছে ঘোড়ার গাড়ির। চরগুলোর সিংহভাগ জমিতে রবি শস্য উৎপাদিত হয়। পাট, আলু, বাদাম, ভুট্টা, গম, ডাল, পিঁয়াজ, মরিচ, শাকসব্জীসহ বিভিন্ন ধরনের উৎপাদিত ফসল কৃষকরা এখন ঘোড়ার গাড়িতে করে পরিবহন করে হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। এসব ফসল এখন আর ফরিয়া ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করতে হয় না। চরাঞ্চলের কৃষকরা এক দিকে যেমন উৎপাদিত ফসল সহজেই হাটে-বাজারে পরিবহন করছেন অপর দিকে কৃষি উপকরণ সার-বীজসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করে ঘোড়ার গাড়িতে করে সহজেই বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন।
এ ছাড়াও যাত্রীসহ রোগী বহনেও ঘোড়ার গাড়ির কদর লক্ষ্যনীয়। এ সুযোগে ঘোড়ার গাড়ির মালিকরাও অর্থ উপার্জন করে সুন্দরভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ঘোড়ার গাড়ি চালক আমজাদ হোসেন জানান, প্রতিদিন গাড়ি চালিয়ে প্রায় ৭/৮’শ টাকা উপার্জন করা যায়। ঘোড়ার পিছনে দৈনিক এক থেকে দেড়’শ টাকা খরচ হয়। বাকী টাকা তার দৈনিক আয়।
চালক সাইদুর রহমান জানান, বগুড়া, রাজশাহী, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে শ্রমিকের কাজ করেও ঠিকভাবে সংসার চালানো সম্ভব হতো না। এখন এ গাড়ি চালিয়ে সংসারের খরচ বহন ছাড়াও আয় করতে পারছি। এখন শ্বশুর বাড়িসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও যাই এই গাড়িতে। গাড়ি চালিয়ে দৈনিক যে আয় হয় তাতে আর কোন সমস্যা হয় না।
কৃষক আনারুল জানান, চর অঞ্চলে এখন অসংখ্য ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়িতে এখন যাত্রী পরিবহন ছাড়াও চরের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে সহজ হচ্ছে। এতে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। সব কিছু মিলে ঘোড়ার গাড়ি এখন চরাঞ্চলবাসীর পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম।