এবারে গাইবান্ধায় চলতি বোরো মৌসুমে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া বিপর্যস্ত করেছে জনজীবনকে। এর পরও সব প্রতিকুলতার মধ্যে কাঙ্খিত ফলনের আশায় কৃষকরা কমোড় বেঁধে ব্যস্ত সময় পার করছেন চারা রোপনে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, এবারে চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩’শ ৫ হেক্টর জমি।
ইতো মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত ৯ হাজার ৪’শ ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো চারা রোপন করা হয়েছে। তবে চাষ এখনও অব্যাহত রয়েছে। কৃষকরা বলেন, জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বোরো চাষের উপযুক্ত সময়। এ সময় চারা রোপন করলে ফসল ভালো হয়। শীতের কারনে চারা রোপন বিলম্ব হলেও গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় চারা রোপনে ব্যস্ততা বেড়েছে। সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের উজির ধরণী বাড়ী গ্রামের কৃষক আঃ মালেক (৪০) বলেন, তিনি ৩ বিঘা জমিতে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছি। জমি প্রস্তুত করলেও এ সময় শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। তাই চারা রোপনে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
একই সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুপতলা গ্রামের কৃষক জমির উদ্দিন জানান, বাপের দেওয়া জমি নাই। ২০ শতক জমি বন্ধক নেওয়া আছে। কারেন্টের মিশিন নাই। শ্যালোত থাকি পানি নিলে ম্যালা গুলা ট্যাকা নাগে। ঘরত এ্যাকনা ছাগোল আছলো। সেট্যা বেচি জমিত পানি নিয়া মেশিন দিয়া চাষ করে নিচি। এখন ধান নাগব্যার চাই। আল্লাহ্ যদি রহম করে ধান ভালো হলে ভাতের চিন্তা থাকক্যার নয়।
সদর উপজেলার মালিবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত মালিবাড়ী গ্রামের কৃষক ফুলমিয়া (৪২) জানান, তিনি ৪ বিঘা জমি চাষ করেন। ৮ সদস্যের পরিবার। জমির ফসল দিয়ে খাওয়া-দাওয়া চলে। আবার এর ওপরে সংসারের খরচসহ সারা বছরের দায়-দেনা মেটে। তাই বোরোর ওপর নির্ভর করতে হয়। ইতিমধ্যে ২বিঘা জমিতে চারা রোপন করেছি। বাকী ২ বিঘাও রোপনের প্রস্তুতি চলছে।
সদর কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহাদৎ হোসন জানান, এবারে চলতি রবি মৌসুমে সদর উপজেলায় ২১ হাজার ৩’শ ৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। বোরো চাষ সফল করতে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে উন্নতজাতের বীজ, কৃষি ঋণ এবং সার সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কিছু প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষককে ১ বিঘা পরিমাণ জমিতে প্রয়োজনীয় বোরো চাষের জন্য হাইব্রিড জাতের বীজ প্রণোদনা হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।