বর্ষা ভরা মৌসুম শুরু আগেই ক্ষতিগ্রসত্ম বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু। তিনি বলেন, বর্ষার আগে শুকনা মৌসুমে বাঁধগুলো মেরামত করলে মজবুত ও টেকসই হতো। বর্ষার সময় কাজ করলে তা স্থায়ী হয় না। তবে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারী বৃষ্টির কারণে বাঁধের বিভিন্ন স্থানের মাটি ধসে গেছে। জরুরীভাবে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যা থেকে গাইবান্ধা জেলাকে রক্ষা করতে মোট ২৪০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৭৮ কিলোমিটার বাঁধ উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে নির্মিত। ১৯৬২ সালে নির্মিত গুরম্নত্বপূর্ণ এ বাঁধ জেলার চারটি উপজেলার ভেতর দিয়ে গেছে। এটি উত্তরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন থেকে সদর ও ফুলছড়ি হয়ে সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিয়ন পর্যনত্ম বিসত্মৃত। বাঁধটি চলাচলের রাস্তা হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। কিন’ দীর্ঘ দিনেও বাঁধটি টেকসইভাবে সংস্কার করা হয়নি।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ২৯টি স্থানে মাটি সরে ধস দেখা দিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- সদর উপজেলার শহর রক্ষা বাঁধের ডেভিড কোমপানীপাড়া, খোলাহাটি ইউনিয়নের বাহারবন্দ, মোল্লা বাজার সুইস গেটের পাশে, কিশামত বালুয়া কানিপাড়া, মালিবাড়ি ইউনিয়নের বারবলদিয়া, কামারজানি ইউনিয়নের গোঘাট, কামারজানি বাজার, গিদারি ইউনিয়নের বাগুরিয়া, ধুতিচোরা, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট, শ্রীপুর ইউনিয়নের চাপরা, গোয়ালপাড়া, উত্তর শ্রীপুর, চন্ডীপুর ইউনিয়নের কামারের ভিটা, লালচামার, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ভাটি কাপাসিয়া, ফুলছড়ি উপজেলার বালাসি, কাইয়ারহাট, উড়িয়া ইউনিয়নের পাকারমাথা, হাওয়া ভবন, হাজিরহাট, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী, ফুলছড়ি সদর ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি এবং সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের পবনতাইর, পূর্ব ঝড়াবর্ষা, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের খেয়াঘাট, বাদিনারপাড়া, সাঘাটা সদর ইউনিয়নের হাসিলকান্দি।
শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর ইউনিয়নের গোয়ালবাড়ী এলাকায় বাঁধ বেহাল। ভারী বৃষ্টির কারণে বাঁধের মাটি সরে ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধের নিচ থেকে মাটি কেটে উপরে ফেলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের ওপর দিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করছে। বাঁধের বেশির ভাগ জায়গায় নদীভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো মানুষ বসতি স্থাপন করেছেন।
সদরের খোলাহাটি ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া গ্রামের তরুণ সমাজসেবক প্রকৌশলী শামীম প্রামানিক বাদল বলেন, ভারী বৃষ্টির কারণে বাঁধটির দুপাশের মাটি সরি গিয়ে বড় আকারে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাঁধের উপর দিয়ে পথচারীরা ও সবধরণের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এমনকি বাঁধ সংলগ্ন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাঁধের উপর মোল্লা বাজার নামে একটি বড় বাজার রয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি সংস্কার করা না হলে যে যেকোন সময় বড় ধরণের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেভিড কোম্পানীপাড়ার বাসিন্দা সোহাগ মৃধা বলেন, বৃষ্টিতে মাটি সরে যাওয়ায় বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এর মধ্যে বাঁধের কাঁচা রাসত্মা দিয়ে ট্রাক্টর চলাচল করায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ জন্য বাঁধের উপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে বাঁধটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
পাউবোর গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক হিলালী বলেন, বাঁধের ৮ থেকে ১০টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাঁধের ধসে যাওয়া স্থানগুলো জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের কাজ করা হবে।