উড়ে এসে জুড়ে বসে হাতে পেয়েছেন আলাউদ্দিনের চেরাগ। নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে জাহির করে নেমেছেন এমপিও বাণিজ্যে। সকল দপ্তর যেন হাতের মুঠোয়। কোন নিয়ম-নীতির পরোয়া না করে অনিয়মের স্বর্গে বাস করছে এই দবির উদ্দিন? এই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। যার অনিয়ম-দূর্নীতির অনেক ফিরিস্তি জমা রয়েছে এই প্রতিবেদকের দপ্তরে।
ঘটনার আদ্যোপান্ত ও অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৪ সালে কারিগরি শাখা ও ২০০৫ সালে সাধারণ শাখা এমপিওভূক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে এমপিও ভুক্ত অধ্যক্ষ ছিলেন জাকির হোসেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যত্র চলে গেলে পদটি শুন্য হয়। এ সময় উড়ে এসে জুড়ে বসে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বভার গ্রহন করেন এই দবির উদ্দিন। হাতে পেয়ে যান আলাউদ্দিনের চেরাগ।
জানা যায়, কারিগরি শাখার সকল জনবল এমপিওভুক্ত হলেও সাধারণ শাখায় শুধু মাত্র অধ্যক্ষ ও একজন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হন। বিধি অনুযায়ী কলেজ অধ্যক্ষ না থাকলে সিনিয়র প্রভাষক হবেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। দবির উদ্দিন তথ্য গোপন করে নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে জাহির করে শুরু করেন অনিয়মের কর্মযজ্ঞ। স্বপ্ন দেখেন এ প্রতিষ্ঠানকে নতুন ভাবে এমপিওভুক্ত করে নিজেকে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে জাহির করতে। এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন শিক্ষক/ কর্মচারীগণসহ সাবেক গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন বিভিন্ন দপ্তরে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৬ আগস্ট/২০২৩ তারিখের পত্রে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে রংপুর আঞ্চলিক পরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর বিষয়টি তৎকালীন রংপুর আঞ্চলিক পরিচালক তদন্ত করলেও অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে অধ্যক্ষ নামধারী দবির উদ্দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। অপর একটি পত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলকে এমপিওভুক্ত করার জন্য মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
প্রশ্ন উঠে এমতাবস্থায় কি ভাবে নতুন করে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হতে পারে? সেখানে ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজকে কোড প্রদান করা হয়নি। ১২-০২-২০২৪ তারিখ ও ০৪-০২-২০২৪ তারিখের ফোল্ডারে দেখা যায়, ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজকে কোড প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ৭০টি প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, কোন নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবার পরে কোড প্রাপ্তির পর পরিচালক/ উপপরিচালক কার্যালয় (আঞ্চলিক) থেকে আবেদনের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড নিয়ে শিক্ষক / কর্মচারীগণের তথ্য যাচাই-বাছাই এর পরে ড্যাশবোর্ডে পিডিএস আইডি সংযোজন করতে হবে। একই তালিকায় কুড়িগ্রাম সদরের মধ্যকোমরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও কলেজ কোড প্রাপ্তির পরেও শিক্ষক/ কর্মচারীর তথ্য যাচাই-বাছাই না হওয়ায় ড্যাশবোর্ডে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। অথচ ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের ড্যাশবোর্ড ২০১০ সাল থেকে চালু রয়েছে। শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর ০৭-০৯-২০২৩ তারিখের স্মারক মোতাবেক মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের জনবল এমপিও ভুক্ত করার জন্য সহপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ তালিকায় ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের মোট ২৭ জন শিক্ষক / কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ একটি কুচক্রী মহলের তৎপরতায় ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় এমপিওভুক্ত করেন।
এ মর্মে ওই কলেজের প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা) আইয়ুব আলী দূর্নীতি দমন কমিশন কুড়িগ্রাম কার্যালয় এর স্মারক নং- ৩৩৬ তারিখ: ০৫ জুন ২০২৪ খ্রিঃ এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কুড়িগ্রাম এর স্মারক নং- ০৫.৪৭.৪৯০০.০১৯.০২.০০১.২৪-৭৮ তারিখ: ২০ জুন ২০২৪ খ্রিঃ মোতাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ বরমান হোসেন (শিক্ষা ও আইসিটি) কুড়িগ্রাম ও তদন্ত কর্মকর্তা দপ্তরের ২৬ জুন/২০২৪ তারিখে ভোগডাঙ্গা কলেজের অবৈধ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত জালিয়াতি ও প্রতারণা মূলক আর্থিক কার্যাদির বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন। এ তথ্যের প্রেক্ষিতে দবির উদ্দিন অদ্যবধি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে প্রতিবেদন প্রেরণ করেননি। এমতাবস্থায় এমপিও আবেদন প্রেরণ ও বাস্তবায়ন আইন বহির্ভূত হলেও জুলাই/২০২৪ তারিখে এমপিও মাসে মোঃ কাশেম আলী, অফিস সহায়ক, ৯৫৬৮৯১১০৭ এবং মোঃ হোসেন আলী, নৈশ্য প্রহরী, ৫৬৮৯১১০৮ পদে ইনডেক্স প্রদান করা হয়েছে।
তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং অবৈধ্য ব্যক্তির স্বাক্ষরে এমপিও প্রদান করার প্রতিবাদে প্রভাষক আইয়ুব আলী ও সিরাজুল ইসলাম গত ০৩-১০-২০২৪ ইং তারিখে বাংলাদেশ সচিবালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের দাবী জানানো হয়। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ নামধারী দবির উদ্দিন এর সাথে একাধিকবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।