শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের নির্দেশ উপেক্ষিত। ৭ মাসেও তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা না মেলায় অনিয়মের স্বর্গে বাস করছেন কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের অধ্যক্ষ নামধারী দবির উদ্দিন। ফলে তার কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীসহ অভিভাবকগণ।
ঘটনার আদ্যোপান্ত ও অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজটি ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০০৪ সালে কারিগরি শাখা ও ২০০৫ সালে সাধারণ শাখা এমপিওভূক্ত হয়। সেই তথ্য অনুসারে মোঃ জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে এমপিও ভুক্ত হন। মোঃ জাকির হোসেনের ইনডেক্স নং আর৩০০২৮৪৭এবং পিডিএস আইডি নং ১০০৩৯৯২৫৩ যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেল এ ইন নং- ১২২৩৩৫ এ প্রদর্শীত আছে। পরবর্তীতে তিনি অন্যত্র চলে গেলে পদটি শুন্য হয়। উক্ত পদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে সিনিয়র প্রভাষকগণ কে উপেক্ষা করে সাবেক এমপি তাজুল ইসলাম চৌধুরীর বড় ভাই শফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি যার ছিল একছত্র কর্তৃত্ব। তার সহযোগিতায় অবৈধভাবে দবির উদ্দিন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। কারিগরি শাখার সকল জনবল এমপিওভুক্ত হলেও সাধারণ শাখায় শুধু মাত্র অধ্যক্ষ ও একজন কর্মচারী এমপিওভুক্ত হন।
বিধি অনুযায়ী কলেজ অধ্যক্ষ না থাকলে সিনিয়র প্রভাষক হবেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। দবির উদ্দিন তথ্য গোপন করে নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে জাহির করেন। এমপিও ভুক্ত পদ শুন্য হলে এমপিও ভুক্ত প্রভাষক (ইনডেক্স নং থাকতে হবে) তৎকালীন নিয়োগ বিধি ১৯৯৫-২০১০ অনুযায়ী কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু মোঃ দবির উদ্দিন কোন পর্যায়ে এমপিও ভুক্ত প্রভাষক হিসেবে ইনডেক্স ভুক্ত ছিলেন না। বিধি অনুযায়ি অবৈধ হবেন মর্মে বুঝতে পেরে শুরু হয় তার অনিয়মের পথ চলা। এ সময় থেকে শুরু করেন এ প্রতিষ্ঠানকে নতুন ভাবে এমপিওভুক্ত করার প্রচেষ্টা। যাতে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে দেখতে পান। তার এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষক/ কর্মচারীগণ, সাবেক গভর্নিং বডির সদস্যবৃন্দ অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপসচিব মো. শাহীনুর ইসলাম স্বাক্ষরিত ১৬ আগস্ট/২০২৩ তারিখের পত্রে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে রংপুর আঞ্চলিক পরিচালককে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হতে চললেও আজবধি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে করে অনেকের সন্দেহ রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর আব্দুল মতিন লস্কর এর সাথে গোপন আঁতাত করে অধ্যক্ষ নামধারী দবির উদ্দিন বহাল তবিয়তে থেকে অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করে রাম রাজত্ব কায়েম করে আসছেন।
অপর একটি পত্রে নিয়োগপ্রাপ্ত জনবলকে এমপিওভুক্ত করার জন্য মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়। এমতাবস্থায় কি ভাবে নতুন করে প্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হতে পারে? এবং ০৪-০২-২০২৪ ইং তারিখের প্রথমে প্রকাশিত পত্র যা সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজকে কোড প্রদান করা হয়নি। ১২-০২-২০২৪ তারিখ ও ০৪-০২-২০২৪ তারিখের ফোল্ডারে দেখা যায় ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজকে কোড প্রদান করা হয়েছে। যেখানে ৭০টি প্রতিষ্ঠান দেখানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, কোন নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবার পরে কোড প্রাপ্তির পর পরিচালক/ উপপরিচালক কার্যালয় (আঞ্চলিক) থেকে আবেদনের মাধ্যমে পাসওয়ার্ড নিয়ে শিক্ষক / কর্মচারীগণের তথ্য যাচাই-বাছাই এর পরে ড্যাশবোর্ডে পিডিএস আইডি সংযোজন করতে হবে। একই তালিকায় কুড়িগ্রাম সদরের মধ্যকোমরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ও কলেজ কোড প্রাপ্তির পরেও শিক্ষক/ কর্মচারীর তথ্য যাচাই-বাছাই না হওয়ায় ড্যাশবোর্ডে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। অথচ ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের ড্যাশবোর্ড ২০০৫ সাল থেকে চালু রয়েছে।
শিক্ষক কর্মচারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এর ০৭-০৯-২০২৩ তারিখের স্মারক মোতাবেক মোট ১০টি প্রতিষ্ঠানের জনবল এমপিও ভুক্ত করার জন্য সহপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ প্রদান করেন। এ তালিকায় ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের মোট ২৭ জন শিক্ষক / কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। অথচ একটি কুচক্রী মহলের তৎপরতায় ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে পুনরায় এমপিওভুক্ত করেন। এ মর্মে দূর্নীতি দমন কমিশনেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যানবেইস তথ্য জরিপে নাম রয়েছে নিম্ন সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ সাখাওয়াত হোসেন এবং অফিস সহায়ক প্রদীপ বর্মনের। কিন্তু পিডিএস আইডিতে তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে কলেজ সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বরাবর অভিযোগ করা হয়েছিল। অধ্যক্ষ নামধারী দবির উদ্দিন ব্যাকডেটে ১৫ জন শিক্ষক কর্মচারীর নাম ড্যামবোর্ডে ও পিজিএস আইডি বসিয়েছেন। যাদের কোন তথ্য ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ শিক্ষা জরিপে নেই। অথচ ২২ জনের অবৈধ নাম সংযোজন করেছেন। গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য গণের সাথে যোগাযোগ করলে জানাযায় ২০০৫ সাল পরবর্তী সময়ে বিধি অনুযায়ি নিয়োগ বোর্ড গঠন যেখানে ডিজি প্রতিনিধি, বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ এবং কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণ থাকবেন। সেখানে সমস্ত স্বাক্ষর জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন। তথ্য গোপন করে পুনরায় এমপিও কোড নিয়েছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রনালয় এবং অধিনস্ত দপ্তর সমূহে রয়েছে অনেক অভিযোগ। বাংলাদেশ দূর্নীতি দমন কমিশনেও এ মর্মে অভিযোগ রয়েছে।
এখন অন্যান্যদের কাগজপত্র না দেয়ায় পিডিএস আইডি রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হচ্ছে না কলেজের সমস্ত রেজুলেশন খাতা, শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য বাড়িতে সংরক্ষণ করেন। যা বেআইনি। অধিকাংশ শিক্ষক কর্মচারীর নিয়োগপত্র, যোগদানপত্র নিজের কব্জায় রেখেছেন। শিক্ষক কর্মচারীকে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে ভোগডাঙ্গা মডেল কলেজের প্রভাষক আইয়ুব আলী বলেন, দবির উদ্দিন বিধিবহির্ভূত ভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এটি মোটেও কাম্য নয়। এই ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত তদন্ত করে সামাধান দেয়া দরকার। যেহেতু অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন ইস্তফা দিয়েছেন তাই পিডিআইএস সম্পন্ন সিনিয়র প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের জন্য দাবি করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দবির উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই অভিযোগ কই পেলেন। আপনি আমার সঙ্গে সাক্ষাতে কথা বলেন।
মুঠোফোনে কথা হলে রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর আব্দুল মতিন লস্কর জানান, আসন্ন ঈদের আগে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগীদের দাবী, যেহতু তদন্ত নির্দেশের প্রায় ৭ মাস অতিবাহিত হচ্ছে আজবধি ব্যবস্থা মিলছেনা সেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা।