গাইবান্ধায় ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা। ফুসে উঠেছে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ। ঘটনার আসল নেপথ্য রহস্য নিয়ে এলাকার স্বর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, এটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের জের না অন্য কিছু?
জানা গেছে, ১৭ ফ্রেব্রুয়ারি কামারজানী ইউনিয়নের বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আনন্দ টিভিসহ বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি কামারজানী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা খন্দকার আজিজুর রহমান বাদি হয়ে বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গত ২৫-০২-২০২৪ ইং তারিখে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি মামলা (নং ২৯/২৪) দায়ের করেন।
এদিকে, মামলা দায়েরের পরেও তারা বালু উত্তোলন ও ব্যবসা চালিয়ে গেলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদ আল হাসান একাধিকবার অভিযান চালিয়ে বালু পরিবহন কাজে ব্যবহৃত গাড়ী জব্দসহ জরিমানা আদায় করেন।
অপর দিকে, এ মামলা দায়েরের পর মামলার আসামি জাহাঙ্গীর আলম গত ২৪-০৪-২০২৪ইং তারিখে মারপিট, সাধারণ জখম ও মৃত্যুর ভয়ভীতি প্রদর্শন পূর্বক চাঁদাবাজির অভিযোগে সদর থানায় একটি মামলা (নং ৩২/২৪) দায়ের করেন। এ মামলায় সাংবাদ প্রচারকারী সাংবাদিক মিলন খন্দকার, সুমন মিয়া, রিয়ন ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করেন।
উল্লেখ্য, দায়েরকৃত এ মামলার বিষয়টি এলাকায় জানা-জানি হওয়ায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। মামলার অভিযোগের বিষয়-বস্তু, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, যুক্তিতর্ক নিয়ে স্বর্বত্র উঠেছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ। জাহাঙ্গীর আলমের দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে সচেতন মহলের অনেকেই বলছেন, ওই সাংবাদিকরা যদি দীর্ঘ দিন ধরে চাঁদা দাবি করে থাকে তবে জাহাঙ্গীর আলমের উচিত ছিল নিজেকে রক্ষায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা। কিংবা সাংবাদিক সংগঠনে অভিযোগ করা। কিন্তু সেটি তিনি করেননি। প্রকৃতপক্ষে ওই ৩ সাংবাদিক চাঁদা দাবিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে জাহাঙ্গীর আলম স্বাভাবিকভাবে আতঙ্কে থাকার কথা। এমন অবস্থায় কি করে তিনি গত ২৮-০৩-২০২৪ইং তারিখে সন্ধ্যে ৭টায় সাংবাদিকদের ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে কামারজানি ইউপি কার্যালয়ের সামনে এলেন? বিষয়টি বোধগম্য নয়। এখানে যদি ওই সাংবাদিকরা চাঁদা দাবিতে গলায় ছোড়া ধরে মারপিটের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তবে জাহাঙ্গীর আলম এ সময় পারতেন আত্নরক্ষায় চিৎকার দিয়ে লোকজনের সহায়তায় তাদেক আটক দিতে। সেটি না করে কি করে তিনি চাঁদা বাবদ ১ লাখ টাকা দিলেন? বিষয়টি হাস্যকর এবং রহস্যজনক। এও বলাবলি হচ্ছে যেহেতু ঘটনার সময় তিনি চিৎকার দেননি তাই কোন খবরের ভিত্তিতে সাক্ষীরা ঘটনাস্থলে আসলেন? প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনা যদি সত্যই হবে তবে ঘটনা ঘটার ২৫/২৬ দিন পর মামলা দায়েরের নেপথ্য রহস্যই বাকি? এটি অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ চক্রের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচারের জের না অন্য কিছু?
অপর দিকে, জাহাঙ্গীর আলমের এহেন নেক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ। তারা এ রহস্যজনক মামলা অতি দ্রুত প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার (৩ জুন) দুপুরে গাইবান্ধার ডিবি রোডে প্রতিবাদি সাংবাদিক সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়ক অবরোধ কর্মসুচি পালন করেন। সমাবেশে বক্তাগণ এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।
সচেতন মহলের মন্তব্য, পুলিশ প্রশাসন তৎপর হলে মামলাটির সঠিক তদন্তে বেড়িয়ে আসবে ঘটনার আসল নেপথ্য রহস্য। সেই সাথে মিলবে সৃষ্ট ঘটনার সুষ্ঠ সমাধান।