“বিন্দু থেকে সিন্ধু” কিংবা “মরুতে সরোবর” কোন উপমাই যথেষ্ট নয়। বলছিলাম গাইবান্ধা সিদ্দিকিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার কথা। ১৯৫২ ইং সালে উত্তর বঙ্গের সু প্রসিদ্ধ পীরে কামিল শাহ্সুফী হযরত মাওলানা মফিজ উদ্দিন আহমদ বাজিতপুরী (রহঃ) এর আন্তরিক প্রচেষ্টায় গাইবান্ধা শহরতলীর সাদুল্লাপুর রোডের খানকাহ্ শরীফ এলাকায় যাত্রা শরু করে এ প্রতিষ্ঠানটি। মূলত তখন এটি ছিল জৌলস বিহীন টিন সেডের ঘর। বেতন নেই, ভাতা নেই, শ্রেণি কক্ষ নেই, তেমন ছাত্র/ছাত্রী নেই, শুধু নেই আর নেই। কিছু উদার মনা মানুষের শুভ কামনা আর বুদ্ধি পরামর্শ, শিক্ষক নামের ওই তরুনদের উদ্যমতা, আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চ্যালেঞ্জে থেমে যায়নি এর পথ চলা।
প্রতিষ্ঠানটি উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতার মুখে ২০১৭ইং সালে এর হাল ধরেন উদ্যমী শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব শরীফ মোঃ আবু ইউসুফ। তিনি অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে প্রথমেই দৃষ্টি দেন পাঠদান দক্ষতা বৃদ্ধি, ছাত্র/ছাত্রী অভিভাবকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ বিভিন্ন দিকে। তার এ উদ্যোগে এগিয়ে আসেন প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ। প্রতিটি সুযোগকে সুন্দরভাবে কাজে লাগান অধ্যক্ষ শরীফ মোঃ আবু ইউসুফ। বর্তমান এ প্রতিষ্ঠানটি এলাকার মানুষের কাছে তথা গাইবান্ধাবাসীর জন্য আশীর্বাদ।
জানা যায়, অভিভাবক/শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক সেবা দেয়া হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে অধ্যক্ষ শরীফ মোঃ আবু ইউসুফ অভিভাবক/ শিক্ষার্থীদের জন্য এই সেবা প্রাপ্তিকে হাতের নাগালে পৌঁছে দিয়ে আসছেন। এ প্রতিষ্ঠানের ব্যাবস্থাপনার স্বীকৃতি স্বরূপ দাখিল, আলিম ও ফাযিল পরীক্ষা কেন্দ্র এবং কামিল প্রক্রিয়াধীন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় সুযোগ্য আলিম আলিমাহ তৈরি করা।
দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য সত্যিকারের ওরাছাতুল আম্বিয়া হিসেবে গড়ে তোলা। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বের উন্নয়ন কর্মক্ষেত্রে অংশ গ্রহণে দক্ষতা লাভ করা। পিতা-মাতার খেদমতসহ সমাজ, দেশ ও জাতীয় কল্যাণে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার মানসে এ প্রতিষ্ঠানের সূচনা। আজ অবধি তার বাস্তবায়ন চলছে। ছাত্র/ছাত্রীদেরকে ডিগ্রী/সার্টিফিকেট প্রদান নয়, মানুষের মানবিক গুনাবলি বিকাশ ঘটানোই প্রকৃত লক্ষ্য।
অধ্যক্ষ শরীফ মোঃ আবু ইউসুফ জানান, অভিভাবকদের দারিদ্রতা আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বাল্যবিবাহ, অভিভাবকদের অসচেতনতা বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে ব্যাঘাত ঘটে এ প্রতিষ্ঠানের চলার ছন্দ। কিন্তু এক ঝাক তরুণ মেধাবী শিক্ষক/শিক্ষিকা আর গতিশীল নেতৃত্ব সে শূন্যস্থান পূরণ করে নিমিশেই।
পরিশেষে এ কথা না বললেই নয় ইলেক্ট্রনিক ও প্রিণ্ট মিডিয়ার কল্যাণে এ প্রতিষ্ঠান আজ গাইবান্ধা জেলায় সুপরিচিত এক নাম। অনেকের কাছে বিস্ময়, অনেকের কাছে আরাধনা, কারো কাছে উদাহরণ, কারো প্রেরণা। আমরা কামনা করছি এর পুনঃ পুনঃ সাফল্য।